ভাঙ্গা গড়ার ১৬২ বছর: কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী, টাউনহল, মুক্তমঞ্চ-শহীদবেদী, শ্রীঅরবিন্দভবন

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীকৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী

সঞ্জিত দত্ত

সারস্বত সাধনায় নদীয়া তথা বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যশালী ইতিহাসে গ্রন্থাগারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা  ছিল। বৌদ্ধযুগে  বৌদ্ধবিহার, এছাড়া বিভিন্ন মঠ মন্দির, টোল,মাদ্রাসা-মক্তব বা রাজা বাদশা, বিত্তবানদের নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যাক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগার থাকলেও সাধারণের গ্রন্থাগার বা সাধারণ গ্রন্থাগার (Public Library) এর প্রচলন উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে।

১৮৫০ সালে গ্রেট বৃটেনে ‘পাবলিক লাইব্রেরিজ অ্যাক্ট’ চালু হয়। বৃটিশ শাসিত ভারতে এই আইন প্রণয়ন ভারতে সাধারণ গ্রন্থাগার আন্দোলনে নতুন পথের দিশা দেখায়। যদিও এর আগে ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি স্যার উইলিয়াম জোন্স এর উদ্যোগে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি তৈরি হয়। ১৮৩৫ সালের ৩১ আগস্ট বোম্বাই (মুম্বাই) পাবলিক লাইব্রেরীর ধাঁচে তিনশ টাকার অংশীদারত্বে কলকাতায় একটি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়, যার পথ চলা শুরু হয় ১৮৩৬ সালের ৩১ মার্চ কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরী নামে। কিন্তু এগুলি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। ১৮৫৬ সালের ১ জুলাই কৃষ্ণনগর কলেজে নদীয়াবাসী শিক্ষানুরাগীদের এক নাগরিক সভার (কনভেনশন) সিদ্ধান্তের মাধ্যমে  কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর জন্ম।

কৃষ্ণনগর কলেজ প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী প্রভাবিত প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনায় বিশ্বাসী নদীয়ার মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় (রাজত্বকাল ১৮৪১ -১৮৫৬)এর আগ্রহ এর মূলে কাজ করে ছিল। জেলার বিদ্যালয় সমূহের পরিদর্শক হজসন প্র্যাট(আই. সি .এস.) এবং তদানীন্তন জেলার মুখ্য-আমিন (সদর আলা) বাবু রামলোচন ঘোষ (ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষ ও লালমোহন ঘোষের পিতা)এর আহবানে এই সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় নদীয়ার মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় ছাড়াও নগরের বিশিষ্ট জন, শিক্ষানুরাগী, পদস্থ সরকারি কর্মচারীবৃন্দ, রাণাঘাটের জমিদার পালচৌধুরী, উলা-বীরনগরের মুখোপাধ্যায়, শিবনিবাসের বৃন্দাবন সরকার, নাটুদহের প্রাণকৃষ্ণ পাল প্রভৃতি বিভিন্ন জমিদারবংশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। গ্রন্থাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সভায় আর্থিক দান আহবান করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঐ সভা থেকেই দশ হাজার টাকা সংগৃহীত হয়। সংগৃহীত অর্থ সরকারি ট্রেজারিতে লাইব্রেরী তহবিলে জমা রাখা হয়। মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় গোবিন্দ সড়ক মৌজায় গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য এক একর উনিশ শতক নিষ্কর জমি দান করেন [জেলা নদীয়া, থানা কোতয়ালী, মৌজা ৯৪ নং গোবিন্দ সড়ক , তৌজি ৩৯৯, পরগণা উখড়া, খতিয়ান ৩২৮, দাগ ৩৮৮ জমির পরিমাণ এক একর উনিশ শতক, নিষ্কর, দাতা নদীয়ার মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় বাহাদুর, গ্রহীতা কৃষ্ণনগরের জনসাধারণ।]

মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় বাহাদুরকে সভাপতি, বাবু রামলোচন ঘোষকে (১৭৯০-১৮৬৬) সম্পাদক, নদীয়ার  জেলাশাসক (ডবলু.জে.হারশেন ?) কে কো্যাধ্যক্ষ করে একটি পরিচালন সমিতি গঠন করা হয় । গ্রন্থাগারের প্রথম নামকরণ হয় The Krishnagar Public Library and Reading Club। পরবর্তী কালে শুধুমাত্র Krishnanagar Public Library নামে সাধারণ গ্রন্থাগারটি পরিচিতি লাভ করে। বৃটিশ সরকারী আধিকারিক, সিভিলিয়ান, শিক্ষিত ও বিত্তশালী স্বদেশীয় মানুষজন এর সদস্য হন। তিন বছর সময় লাগে ভবন তৈরি(১৮৫৯)হতে। চারিদিকে বারান্দা ঘেরা ভবনের পিছনদিকে ঘরে বই লেনদেন তথা পাঠকক্ষ ছিল। পাশাপাশি অন্যঘরে বিশ্রাম-পান ভোজন, আড্ডা গল্প ও সামনের দিকে বড় ঘরে বিলিয়ার্ড, দাবা খেলা এবং সামনের খোলা মাঠে লন টেনিস খেলার ব্যবস্থা ছিল। আলোর জন্য মোমবাতিসহ  ইউরোপের নানা দেশে নির্মিত নানা ধরণের টেবিল ল্যাম্প, ঝুলন্ত বাতির ব্যবস্থা ছিল। [বিলিয়ার্ড বোর্ডটি এখন পাঠকক্ষের পড়ার টেবিল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।হ্যাট কোর্ট স্ট্যান্ড, টেবিল ল্যাম্প, ঝাড়বাতি, দাবার টেবিল, পুরাতন চেয়ার টেবিল বেঞ্চ ইত্যাদি পুরাতন আসবাবপত্র, মাঠ সমান করার হ্যান্ড রোলার এখনও গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।] সরকারী দপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্তিগত দান হিসাবে পুস্তক সংগৃহীত হতো।প্রথম গ্রন্থাগারিক হন দীননাথ পাল।

১৮৬৬ সালে যদুনাথ রায় (১৮৩৫-১৮৮৮) সম্পাদক হন। ১৮৬৫ সালে স্থাপিত গোবিন্দ সড়ক বালক বিদ্যালয় নামে একটি দাতব্য  বিদ্যালয় পঠন পাঠনের ঘর না পাওয়ায় গ্রন্থাগার কক্ষে তাদের ক্লাস চালানোর আবেদন করে । বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে যদুনাথ রায় অনুমতি দেন। প্রসঙ্গত বলা যায় ১৮৬০ সালের নীলবিদ্রোহের পর  বেশ কয়েক বছর ধরে নদীয়াতে ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং বসন্ত মহামারি  আকারে দেখা দেয়| এইসময় কিছুদিন রিলিফ ক্যাম্পও চালানো হয় গ্রন্থাগার ভবনে। ফলে গ্রন্থাগারে পাঠক আগমন বেশ কিছুটা ব্যহত হয়। পরে পরিস্থিতি উন্নতি হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অন্যত্র চলে যেতে বললেও তাঁরা ঘর ছাড়তে চান না। গ্রন্থাগারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এবার সম্পাদক মনোমোহন ঘোষ (১৮৪৪-১৮৯৬) অচলাবস্থা কাটানোর উদ্যোগ নেন। ১০ আগস্ট ১৮৯২ কৃষ্ণনগর কলেজে আবার নাগরিক সভা (কনভেনশন) ডাকা হয়। মহারাজা ক্ষিতীশচন্দ্র রায় (রাজত্বকাল ১৮৯০-১৯১১), মনোমোহন ঘোষ, জেলাশাসক, জেলা জজ, কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যক্ষ ও. ডবলু. বিলিং, প্রসন্নকুমার বসু, রামগোপাল চেৎলাঙ্গিয়া প্রমুখের উপস্থিতিতে ঐ নাগরিক সভায় মীমাংসা হয়। চেৎলাঙ্গিয়া পরিবারের থেকে বিদ্যালয়টিকে একটি জমি  দিলে ১৮৯৬ সালে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়।

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী: 1960

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে যখন দেশ উত্তাল সেইসময় পাবলিক লাইব্রেরীকে ঘিরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। বাঘা যতীন এর মত স্বাধীনতা সেনানীদের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের শক্তিচর্চার আখড়া গড়ে ওঠে। সাহেবদের অনেকেই কিছুটা ভীত হয়েই গ্রন্থাগারে কম আসতে থাকেন। এই সময় পরিচালকদের মনে হয় (বিশেষ করে দাতব্য বিদ্যালয়টির অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে) কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন। ‘সাধারণ পুস্তকালয়ের (পাবলিক লাইব্রেরীর) উন্নতি এবং চিরদিন ঐ হিতকারী সমিতি বজায় থাকে ও সাধারণের এই সম্পত্তি হিতকর কাজে ব্যবহার হয়ে উত্তরোত্তর উন্নতিসাধন হয় সেজন্য রীতিমত ঘোষণা প্রচার করে’ ১৯০৬ সালের  ২১ এপ্রিল আবার একটি নাগরিক সভা (কনভেনশন) আহবান করা হয়। ঐ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভা থেকে ট্রাস্টি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে, সভা দ্বারা নির্বাচিত তথা সাধারণের পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ ট্রাস্টিনামা সম্পাদন করে দেবেন। ২৭ ফেব্রুয়ায়ি ১৯০৮ কৃষ্ণনগর সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ট্রাস্টিনামা দলিল সম্পন্ন হয়। [ট্রাস্ট ডিড অব কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী রেজেস্ট্রি তাং ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ ; বুক নং ১, ভল্যুম নং ১৮, পেজ ২৬-৩২, বিয়িং নং ৫৮০, ইয়ার ১৯০৮]।

মনোনীত ট্রাস্টি বা অছি পরিষদের সদস্য হন – ১. প্রসন্নকুমার  বসু, পিতা-উমাকান্ত বসু (এবং স্যার আশুতোষের পিতা গঙ্গাপ্রসাদের বন্ধু) ২.মুরলীমোহন ঘোষ পিতা রামলোচন ঘোষ (এবং মনোমোহন ঘোষ,  লালমোহন ঘোষের ভ্রাতা)৩.কৃষ্ণনাথ রায় পিতা শ্রীনাথ রায়, ৪. জ্যোতিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পিতা শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়, ৫. তমসুক চেৎলাঙ্গিয়া (পিতা ?) ৬.বনোয়ারীলাল গঙ্গোপাধ্যায় পিতা জয়গোপাল গঙ্গোপাধ্যায় ৭. মণীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় পিতা প্রসন্নচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সভা নির্ধারিত ট্রাস্টির দাতাগণ: ১. যদুনাথ চট্টোপাধ্যায় পিতা আনন্দলাল চট্টোপাধ্যায় ২. বিপিনবিহারী বসু পিতা ব্রজনাথ বসু, ৩. জ্যোতিপ্রসাদ রায় পিতা পূর্ণপ্রসাদ রায় ৪. জগৎচন্দ্র চৌধুরী পিতা সারদাপ্রসাদ চৌধুরী ৫. চন্দ্রভূষণ চক্রবর্তী পিতা অক্ষয়চন্দ্র চক্রবর্তী ৬. সুরেন্দ্রলাল রায় পিতা কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায় (এবং দ্বিজেন্দ্রলালের দাদা) ৭. জ্যোতিভূষণ ভাদুড়ী পিতা অধ্যাপক শশধর ভাদুড়ী।

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর তাঁরা মনে করেন কলকাতার মত কৃষ্ণনগরে একটি টাউনহল নির্মাণ করা দরকার । সেজন্য লাইব্রেরী মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে পাবলিক লাইব্রেরীর এক একর উনিশ শতক জমি থেকে দশ শতক জমি দেওয়া হয়। টাউন হলের কাজ শুরু হয়। কাজ করতে গিয়ে অর্থাভাবে কাজ আটকে গেলে প্রয়াত রামগোপাল চেৎলাঙ্গিয়ার স্ত্রী শিবকুমারী দেবী তাঁর প্রয়াত স্বামীর নামে টাউনহলের নামকরণের শর্ত সাপেক্ষে অর্থ সাহায্য করেন। রামগোপাল চেৎলাঙ্গিয়া টাউনহলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯০৯ সালে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রেসিডেন্সী বিভাগের কমিশনার ই. ডবলু. কলিন্স টাউনহলের উদ্বোধন  করেন। এর তিন বছর পর ১৯১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯১২ সালের ১২ অক্টোবর টাউনহলের জন্য নয়জনের একটি আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড বা অছি পরিষদ গঠন করে রেজিস্ট্রি করা হয়।

টাউনহল অছি পরিষদের সদস্য হন-১.হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ২.ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী, ৩.সরোজরঞ্জন বসু, ৪.ললিতকুমার চট্টোপাধ্যায়, ৫.শরৎচন্দ্র সান্যাল, ৬.ইন্দুভূষণ চক্রবর্তী, ৭.মণীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ৮.অঘোরনাথ ভট্টাচায্য, ৯.বলভদ্র চেৎলাঙ্গিয়া। ১৯০৮/০৯ সাল নাগাদ অর্ধ শতাব্দী পার করে আসা কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের ছাদ মেরামত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ছাদে কাঠের কড়ি বরগার সাথে ৭টি লোহার বীম বা জয়েস লাগানো হয়। লোহার বীমগুলি ছিল এই দেশেই তৈরি, সদ্য গড়ে উঠা জামসেদপুরের দেশীয় টাটা ষ্টীল কারখানায় নির্মিত। পাশাপাশি ঐ সময় নির্মিত টাউনহলের বৃহৎ  আকারের বীমগুলি ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করা (যা এখনও খোলা মাঠে পড়ে আছে)।

১৯৫৫ সালে কেন্দ্র সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে সারা দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা গ্রন্থাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীকে নদীয়া জেলার জেলাগ্রন্থাগার রূপে পেতে চায় সরকার। সরকারি প্রস্তাব কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী অছি পরিষদ নাকচ করে দেয়।ঘূর্ণির দেশবন্ধু পাঠাগার সেই প্রস্তাব লুফে নেয়  এবং ১৯২০ (১৩২৬ বঙ্গাব্দ) সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারটি ১৯৫৫ সাল থেকে নদীয়া জেলাগ্রন্থাগার হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

১৯৬০ সাল নাগাদ কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদ লাইব্রেরী মাঠের দক্ষিণ দিকে সীমানা বরাবর ব্যবসায়ীদের দোকান ঘর করার অনুমতি দেয়। (এর প্রায় পাঁচদশক পর  দোকানঘর গুলিকে দোতলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়)। পাশাপাশি মাঠ ভাড়া থেকেও আয় হতে থাকে। এর ফলে অছি  পরিষদের আয় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রায় একই সময় টাউনহল অছি পরিষদের পক্ষ থেকে টাউনহলের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ব্যবসায়ীদের দোকান ঘর করে ভাড়া দেয়। সেই সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানের জন্য টাউনহলের ভাড়া আদায় করতো টাউনহল অছি পরিষদ।

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর জন্মলগ্ন থেকেই লাইব্রেরী ভবন ও সংলগ্ন মাঠ নানা রকম সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছিল। ইংরেজ আধিপত্য ধীরে ধীরে কমার সাথে সাথে দেশীয় আধিপত্য বাড়ছিল। আগেই বলেছি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অহিংস ও সহিংস উভয় মতের অনুসারীরাই কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীকে ঘিরে মুক্তিকামী আন্দোলনের কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। বাঘা যতীন, শহীদ অনন্তহরি মিত্র, শহীদ বসন্ত বিশ্বাস, হেমন্ত সরকার, তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবরাম গুপ্ত, স্মরজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়, তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎ মুখোপাধ্যায় সহ  অসংখ্য স্বাধীনতা সেনানীর কর্মকাণ্ড ছিল এই কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী ও তার মাঠ এবং টাউনহলকে ঘিরে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ, কে এফ নরীম্যান মাধব, শ্রীহরি, মদনমোহন মালব্য, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার আশুতোষ চৌধুরী, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু, ডাঃ অ্যানে প্রমুখ বহু ভারতবিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে বক্তৃতা করে গেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯১২সালে), কাজী নজরুল ইসলাম এর মত প্রথিত যশা মানুষজনের সংগীত মূর্ছনায় এই স্থান প্লাবিত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগেও নানা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠ ও টাউনহল। নাগরিক সভা, জনসভা, মিছিলে বন্দিত হয়েছে বছরের পর বছর|

আর্থিক সহযোগিতার কামনা করে প্রচারপত্র: ১৯৬৬

১৯৬৬ সালে রক্তস্নাত খাদ্য আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলিতেও কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠ এবং টাউনহলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সরকারি ও বে-সরকারি তদন্ত কমিশনের তদন্ত কাজ হয়েছিল এখানেই। খাদ্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণনগরে একটি ‘নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি’ গঠিত হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সাহায্য করা ছাড়াও কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে একটি স্থায়ী শহীদ বেদী ও সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি পাকা সভামঞ্চ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কৃষ্ণনগর ‘নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি’। এই কারণে ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬ জনগণের কাছে আর্থিক সহযোগিতার কামনা করে এক প্রচারপত্র (সম্পাদক শিবরাম গুপ্ত, প্রকাশক আকুলানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়) বিলি করা হয়। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন বা স্টুডেন্ট ফেডারেশন (আজকের এস এফ আই নয়) এর ছাত্ররা নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। জনসাধারণের আর্থিক দানে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে লাইব্রেরীর পুব দিকে একটি স্থায়ী শহীদ বেদী ও টিনের ছাদ দেওয়া একটি পাকা মুক্ত সভামঞ্চ নির্মিত হয়। মুক্তমঞ্চের সামনে ফলক লাগানো হয় ‘ছাত্র ফেডারেশনের সাহায্যে নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্তৃক  স্থাপিত’। শহীদ বেদীর সামনে লেখা হয় ‘কৃষ্ণনগর নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি কর্তৃক স্থাপিত ১৯৬৬’।  বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় এর উদ্বোধন করেন । সেই থেকে সব অনুষ্ঠানেই এই শহীদ বেদীতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষ পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠ ও মঞ্চটি ব্যবহার  করেন।

শ্রীঅরবিন্দ ঘোষের জন্ম শতবর্ষে ১৯৭২ সালে কিছু মানুষের আবেদনের ভিত্তিতে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদ ‘শ্রীঅরবিন্দ ভবন’ নির্মাণের জন্য লাইব্রেরীর উত্তর পশ্চিম দিকে নয় শতক জমি রেজেস্ট্রি করে দেয়। ২৪ নভেম্বর ১৯৭৫ শ্রীঅরবিন্দের সিদ্ধিদিবসে শ্রীঅরবিন্দ ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এরপর জেলাশাসক শ্রীমতি রানু ঘোষ (সভাপতি), গোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পাদক), দীপ্তি বসু, সমীর গুহ, বিমলকুমার রায়, রবি ভাদুড়ী, অজিতকুমার হালদার, শান্তিময় বিশ্বাস, ভোলানাথ দত্ত, বাণী সেন, ডাঃ মণীন্দ্রনাথ রায়, গৌরগোবিন্দ সাহা, রমাপ্রসাদ সমাদ্দার(মহকুমা শাসক), হরিপদ ভট্টাচায (জেলা সমাজশিক্ষা আধিকারিক) এবং কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদের দুজন প্রতিনিধি বংশীধর চেৎলাঙ্গিয়া ও কালীকিংকর চক্রবর্তীকে নিয়ে ১৬ জনের একটি পৃথক কৃষ্ণনগর শ্রীঅরবিন্দ ভবন ট্রাস্টি বোর্ড বা অছি পরিষদ তৈরি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পণ্ডিচেরীর শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম কর্তৃক এই অছি পরিষদকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পণ্ডিচেরীর শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম থেকে শ্রীঅরবিন্দের দেহাবশেষ নিয়ে এসে (১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮) কৃষ্ণনগর শ্রীঅরবিন্দ ভবনের নবনির্মিত ধ্যানকক্ষে প্রতিষ্ঠা (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮) করা হয়।

১৮৫৬ সালে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার ১২২ বছর পর লাইব্রেরীর পরিচালন সমিতি সোসাইটি অ্যাক্টে গ্রন্থাগারটির নিবন্ধিকরণ করে (রেজিঃ নং এস-২০৮১৭ অফ ১৯৭৭-৭৮)। সোসাইটি অ্যাক্টে রেজিস্ট্রেশন না থাকায় রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরী ফাউন্ডেশনের মত বিভিন্ন সংস্থা সাহায্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এব্যাপারে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদের তীব্র আপত্তি ছিল। লাইব্রেরী পরিচালন সমিতির সভাপতি অনিলকুমার সাহা ও সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত’র  দৃঢতায় গ্রন্থাগারটির নিবন্ধিকরণ করা সম্ভব হয়। এর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর পরিচালন সমিতির সঙ্গে আছি পরিষদের নানা বিষয়ে মতানৈক্য ঘটছিল। অভিযোগ উঠছিল লাইব্রেরী অছি পরিষদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। ১৯৭৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে গ্রন্থাগার আইন প্রণয়ন করে রাজ্য সরকার। গ্রন্থাগারটিকে বাঁচাতে ও গ্রন্থাগার আইনের সুযোগকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয় গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতি। লাইব্রেরী পরিচালন  সমিতির আবেদনের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে সরকার পোষিত শহর গ্রন্থাগার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে অধিগ্রহণ করা হয় (মেমো নং ৩২৭/এস ই, তাং ৩১ আগস্ট ১৯৮২)। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদের পক্ষ থেকে লাইব্রেরীটিকে সরকারের হাতে হস্তান্তরের সময় শুধু মাত্র গ্রন্থাগার ভবনটিকেই দেওয়া হয়।

১৯৮০র দশকে এসে টাউনহল মেরামতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ছাদ দিয়ে জল পড়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্রভবন(১৯৬১)স্থাপিত হয়েছিল নগরের একপ্রান্তে কৃষ্ণনগর কলেজের জমিতে।এই সময় সংস্কৃতি জগত থেকে দাবি ওঠে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত টাউনহলের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে মেরামত করে উপযুক্ত প্রেক্ষাগৃহের রূপ দিক। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর টাউনহল অছি পরিষদ টাউনহলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের হাতে তুলে দেয় ১৯৮০ দশকের শেষভাগে। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর অনুষ্ঠানের জন্য হল ভাড়া দিতে থাকে। কিন্তু পাশের দোকান ঘরের ভাড়া অছিপরিষদ নিতে থাকে। মজার বিষয় হলো দোকানদারদের ভাড়ার টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে রশিদ হিসাবে জমিদারী ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার আগে ব্যবহৃত চেতলাঙ্গিয়া এস্টেটের খাজনা আদায়ের বাতিল রশিদ দেওয়া হত। এর ফলেই কিছু মানুষের ভ্রান্ত ধারনা হয় টাউনহল চেতলাঙ্গিয়া  এস্টেটের সম্পত্তি।

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী – ২০০৫ সালে

প্রায় দেড়দশক পর রাজ্য সরকার টাউনহলকে ভেঙ্গে বড় করে দ্বিতল প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের টাকা অনুমোদন করে। দুটিতলায় দুটি হলঘর যার মধ্যে একটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে নামাঙ্কিত করার পরিকল্পনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচায ২০০৬ সালে টাউনহলের শিলান্যাস করেন। নদীয়া জেলা পরিষদের তত্বাবধানে কাজ হওয়ার কথা । কাজ শুরুর জন্য পুরানো টাউনহল ভেঙে ফেলাও হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আর কাজ শুরু হয়না। আইনি জটিলতা অথবা অন্য কোন কারণে ১২ বছর পরেও টাউনহলের পুনর্নির্মাণ কাজ হয়নি। দোকানদারদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ও বন্ধ আছে। সম্প্রতি পৌরসভা আগ্রহ প্রকাশ করেছে দায়িত্ব পেলে তারা টাউনহল পুনর্নির্মাণ কাজ করতে পারে। ইতিমধ্যে ২০১৮ সালের জুন মাসে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর অছি পরিষদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠের মুক্তমঞ্চটি ভেঙে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করেছে কৃষ্ণনগর পৌরসভা।

সোসাইটি অ্যাক্টে নিবন্ধিকরণ এবং সরকার পোষিত শহর গ্রন্থাগার হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর নানা স্তরে সাহায্যের আবেদন করা হয় কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর তরফে । রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরী  ফাউন্ডেশন, রাজ্য গ্রন্থাগার দপ্তর, সাংসদ অজয় মুখোপাধ্যায়, সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, খবিরউদ্দিন আহমেদ, জ্যোতির্ময়ী শিকদার, বিধায়ক সুবিনয় ঘোষ, অবনীমোহন জোয়াদ্দার তাঁদের সাংসদ ও বিধায়ক কোটা থেকে, এছাড়া বিভিন্ন গ্রন্থাগার সদস্য, কর্মী, সাধারণ মানুষ আর্থিক বা আসবাবপত্র ইত্যাদি নানা জিনিস দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। গ্রন্থাগারের সার্ধ শতবর্ষের সমকালীন বছরগুলির কিছু আগে-পরে এরদ্বারা গ্রন্থাগার ভবনের উন্নয়ন সম্ভব হয়।একদিকে যখন টাউনহলের বিলুপ্তি ঘটছে অন্যদিকে তখন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর ঐতিহ্যবাহী ভবনের সম্মুখভাগ বজায় রেখে পিছনে তিনতলা অব্দি নির্মাণ কাজ করা হয়। রাজ্য মৎস্য দপ্তর তিনতলায় একশ আসনের একটি হলঘর তৈরি করে উপহার দেয়।নিচের পাঠকক্ষের মাঝের দেওয়াল ভেঙে পাঠকক্ষ আরো বড় করা এবং দুটি সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।

কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর প্রায় ৩৩০০ সদস্যের মধ্যে সক্রিয় সদস্য রয়েছেন ১১১১ জন, শিশু বিভাগে ১৮৮ জন, আজীবন সদস্য ১০জন। প্রতিদিন গড়ে ৭০/৭৫ জন বই লেনদেন করেন । শতবর্ষ প্রাচীন বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ,পত্রপত্রিকা, পাঁচ দশকের পঞ্জিকা ইত্যাদি রয়েছে এখানে। দ্বিতীয় তলায় একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হচ্ছে। গ্রন্থাগার দপ্তরের ওয়েবসাইটে(www.wbpublibnet.gov.in ) কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর হাজার খানেক বই ডিজিটালাইজ করে আপলোড করা হয়েছে ।পরিগ্রহণ খাতা অনুযায়ী গ্রন্থাগারে ২৯ হাজারের কিছু বেশী বই রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার বই কম্প্যুটারিজ করা হয়েছে।ভবিষতে গ্রন্থাগারের সব বই ডিজিটালাইজ হবে। ২০১৬ সালে রাজ্যের ৮০টি এবং নদীয়া জেলার তিনটি লাইব্রেরীর  মধ্যে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীকে ‘মডেল লাইব্রেরী’ হিসাবে ঘোষণা করেছেগ্রন্থাগার দপ্তর।

পাঠকক্ষ-মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় এর নামে

১৮৫৬ সালে যে গ্রন্থাগার গড়ে তোলার জন্য মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় জমিদান করেছিলেন এবং গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল আজ সেই কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। কৃষ্ণনাগরিকগণ ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে পড়ছেন। ২০১৮ সালের ১ জুলাই গ্রন্থাগারের ১৬৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষটিকে মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় এর নামে নামকরণ করেছেন ১৬ আগস্ট ২০১৭ য় গঠিত গ্রন্থাগারের নতুন পরিচালন সমিতি। এতে হয়ত দীর্ঘ ১৬২ বছর পর সমিতির সদস্যরা কিছুটা ঋণমুক্ত হলেন। কিন্তু মহারাজার দান করা জমি এখন একাধিক ভাগে ভাগ করে ব্যবহার করা হলেও প্রায় ৩৬০০ স্কোয়ার ফুটের কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীভবন পিছনে বা পাশে বাড়ানোর দরকার পড়লে তারা অপারগ। ড. এস. আর. রঙ্গনাথনের ‘গ্রন্থাগার একটি ক্রমবর্ধনশীল প্রতিষ্ঠান’ এর তত্ত্ব এখানে অপাংতেয় হয়ে পড়বে। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী অছি পরিষদ কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর প্রতি সাহায্য সহযোগিতার কতটা দরাজ হাত বাড়িয়ে দেবেন তার উপর ভবিষত অনেক কিছু নির্ভর করবে।

Ref:১. ট্রাস্ট ডিড ২. কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী সার্ধশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ ৩. গ্রাম গ্রামান্তর  ৪. এই বাংলার শতায়ু গ্রন্থাগার (অরুণ মুখোপাধ্যায়)  ৫. পশ্চিমবঙ্গের পুরাতন গ্রন্থাগার ও নথিপত্র সংগ্রহ (কুণাল সিংহ)  ৬. শ্রীমা জন্ম শতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ  ৭. কৃষ্ণনগর পৌরসভা শতবার্ষিক স্মারক গ্রন্থ ৮. নদীয়া জেলা গ্রন্থাগার হীরক জয়ন্তী উদযাপন বর্ষ স্মারক গ্রন্থ  ৯. স্বাধীনতা সংগ্রামে নদীয়া  ১০. খাদ্য আন্দোলনের নথি।


Sanjit Dutta

লেখক পরিচিতি: সঞ্জিত দত্ত প্রাক্তন গ্রন্থাগারকর্মী।নিবাস কৃষ্ণনগর , নদীয়া । সংবাদ সাপ্তাহিক “গ্রাম গ্রামান্তর” পত্রিকার ২৫ বছর অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন । সম্পাদনা করেছেন ‘তীরন্দাজ নাট্যপত্র’, ‘রঙ বেরঙের আড্ডা’। নিত্য রেল যাত্রী হিসাবে রেল চর্চা সঞ্জিত বাবুর প্রিয় বিষয়। লিখেছেন “সংবাদ প্রতিদিন”, “কালান্তর”, “এশিয়ান এজ” দৈনিকে । নদীয়া তথা স্থানীয় ইতিহাস চর্চার কাজে নিয়োজিত । প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘মায়াপুরঃ অতীত ও বর্তমান’ , ‘অঞ্জনা নদী তীরে ‘, ‘ফুলডোরে বাঁধা নদীয়া ও রবীন্দ্রনাথ’ | সম্পাদিত গ্রন্থ : ‘সেতার’, ‘অ-শোক জীবন তিন ভুবন’, ‘কবিতার অলিন্দে জীবনের আলাপনে’, যুগ্ম গ্রন্থনাঃ ‘কৃষ্ণনগর সহায়িকা ও একনজরে নদীয়া’ (সহ লেখক গৌতম ধনী ); ‘ভারতীয় রেলের দেড়শো বছরঃএকটি সফর’ (১৮৫৩-২০০২) (সহ লেখক বিশ্বজিত দাস)।

Share the news