ড. বিশ্বম্ভর মন্ডল
কলকাতা ছেয়ে ফেলা একটা বিজ্ঞাপন ‘গলানো সোনা ১০০ টাকা’ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল কয়েক বছর আগে। একইভাবে ২০২২ সালে জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ‘লাইন মারুন’ লেখা বিজ্ঞাপন হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। ‘লাইন মারতে শিখুন!’ বিজ্ঞাপনে ঢেকে গিয়েছিল হুগলী জেলার ব্যান্ডেল, শ্রীরামপুর, বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম শহরও। সব জায়গাতেই বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে রাতের অন্ধকারে। হোর্ডিংয়ে লেখা হয়েছে ‘লাইন মারুন’, ‘নিখরচায় লাইন মারুন’, ‘লাইন মারতে শিখুন’ বা ‘লাইনে ঢুকুন দাদা’ এমন সব শব্দ।
সমাজের ঠিকাদারদের কোন্ মুখটা আসল, আর কোন্টা মুখোশ – বোঝা কঠিন । আড়ালে আকথা কুকথার ঝড় চললেও, প্রায় সব সময়েই প্রকাশ্য সমাজে স্থিতাবস্থার অভিনয় চলে। তাই বিজ্ঞাপনের শব্দ চয়নে এপাশ-ওপাশ হলেও সংস্কৃতি অপসংস্কৃতির সেই চিরন্তন বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । ‘লাইন’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ব্লগার ও লেখক তপু রহমান এর মন্তব্য উল্লেখ করছি – “আমাদের সমগ্র জীবন একটা লাইনে, একটা ছকে বাঁধা, মাঝে মাঝে কেউ কেউ সেই লাইন থেকে বের হয়ে প্রশ্ন করে, লাইনে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে। প্রশ্ন করে, কেন এটা আমাকেও করতে হবে এই বলে। বাকি সবাই মিলে তখন তাকে চুপ করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। সবাই মিলে হুঙ্কার দেয়, লাইনে আসুন”১।
শব্দহীন, নিস্তরঙ্গ এমন সময়ে কিছু শব্দ থেকে যদি সমাজে একটু বুদবুদ ওঠে মন্দ কি! নীরবতার থেকে কথা চলুক, বেলাইনেও চলুক- সমাজে প্রাণ আছে সেটা অন্তত বোঝা জরুরী।
সূত্রঃ (১) চরম উদাস, লাইনে আসুন, ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, নান্দনিক, বাংলাদেশ, www.rokomari.com
লেখক পরিচিতি: ড: বিশ্বম্ভর মন্ডল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক। প্রাবন্ধিক হিসাবে বুদ্ধিজীবী মহলে সুপরিচিত নাম।