এবারের জগদ্ধাত্রী পুজোয় কৃষ্ণনগরে গিয়ে বড্ড মনে পড়ে গেল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে শ্রদ্ধা। ফ্লেক্স আর পোস্টারে ছয়লাপ। কোথাও কোথাও ওঁর অভিনীত ছবির মন ছুঁয়ে যাওয়া সংলাপ। জলঙ্গি ছিল সৌমিত্রর অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা। কৃষ্ণনগরের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে জলঙ্গি নদীর। এই নদীতেই নৌকোপথে কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে পেয়েছিলেন রাজরাজেশ্বরীকে। জগদ্ধাত্রী পুজো শেষ। কৃষ্ণনগরের জলঙ্গি নদীতে এখন চলছে মায়ের বিসর্জন প্রস্তুতি।
শৈশব কৈশোরের অনেকগুলো দিন সৌমিত্রর কেটেছে জলঙ্গির ধারে। কদমতলা ঘাট, ষষ্ঠীতলা মোড়, গোলাপট্টি ইত্যাদি ছিল ওঁর ঘোরার জায়গা। বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ায় ক্রিকেট খেলতেন। সৌমিত্রর বাড়ির রকটাতে ছিল ছেলেদের আড্ডার জায়গা। উচ্ছ্বসিত হতেন কৃষ্ণনগরের কথা উঠলে।”কখনও ভুলিনি, কৃষ্ণনগরে কাটানো ছেলেবেলার দিনগুলোর কথা।” গল্ফগ্রিনের ফ্লাটে বসে একদিন এই কথাই বলেছিলেন আমাকে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের উত্তরসুরি মণীশচন্দ্র রায় সৌমিত্র সম্পর্কে বলছিলেন,”বাবার থেকে বয়সে পনেরো বছরের উপরে বড়ো ছিলেন। কিন্তু কী সাংঘাতিক আপন করে নেবার ক্ষমতা রাখতেন।”
আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিতের গল্পে মশগুল থাকতেন। বেড়াতে গেলে বানিয়ে বানিয়ে ভূতের গল্প বলতেন। একবার দার্জিলিঙে গিয়ে মহারাজের
সৌমিত্রকে ভোলেনি কৃষ্ণনগর। জগদ্ধাত্রীর আনন্দে ম্লান হয়ে যায়নি ওঁর শিল্পীসত্তা। সিএমএস স্কুলে পড়ার সময় ইংরেজি নাটকের অভিনয় হয়েছিল। সেখানে সৌমিত্র রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সৌমিত্র আজও কৃষ্ণনগর কেন, বাংলার রাজা। জগদ্ধাত্রী-বিসর্জনের সন্ধ্যায় মনে পড়ছে সৌমিত্রর আবৃত্তির শেয লাইনগুলো—পিতা নয়, লেখক নয়, স্বার্থ নয়। শুধু বন্ধু, চললাম পুলু।