আই-পি-এস হুমায়ূন কবীরের নতুন অধ্যায়ঃ বাংলা চলচ্চিত্র “আলেয়া”

Tanushree Chakraborty, Priyanka and Sayanee in a scene from 'Aleya'Tanushree Chakraborty, Priyanka and Sayanee in a scene from 'Aleya'
ফারুক আহমেদ

Dr. Humayun Kabir, IPS

চরম প্রশাসনিক ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও দক্ষ প্রশাসক ও সমাজ সচেতন পুলিশ আধিকারিক ড. হুমায়ুন কবীর, আই-পি-এস, সমাজকে নিয়ে ভাবেন এবং সমাজকে সুপথে চালিত করতে তিনি বড় উদ্যোগ নিয়েছেন। মানব কল্যাণের জন্য হাতে কলম তুলে নিয়েছেন, অনেক দিন আগেই।

এবার তিনি কমার্শিয়াল চলচ্চিত্র তথা বাংলা সিনেমা পরিচালনা করছেন।
ড. হুুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, শ্যুটিং শেষ হয়েছে সম্প্রতি। মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘আলেয়া’। মানব সমাজে গভীর ভাবে দাগ কাটবে এই চলচ্চিত্র তিনি আশা করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান ‘শত কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই ছবির শ্যুটিংটা সেরে ফেললাম। কী জানেন, আমরা সবাই সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। সচেতন মানুষ হিসেবে বলতে পারি আজকের পারিপার্শ্বিক অবস্থান খুব একটা সুখের নয়। কোথাও একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমার ছবির বক্তব্য বাল্যবিবাহ আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।’
তিনি আরও জানালেন, ‘আসলে প্রিন্টের চেয়ে ভিস্যুয়াল এফেক্ট বেশি। যে কথাটা লিখলে হত সেটা ক্যামেরায় বললে আরও আরও বেশি অর্থবহ। সেই জন্যই ছবিটা শেষমেশ হল।’  এই ‘আলেয়া’ একটি থ্রিলার ছবি। ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রিয়াংকা, সায়নী ঘোষ, অংকিতা, তনুশ্রী চক্রবর্তী, বাংলাদেশের অভিনেতা আমন রেজা। অন্য চরিত্ররা হলেন গৌতম হালদার, শেখর সমাদ্দার, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সৌম্যজিৎ মজুমদার এবং বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। আরও অনেকেই এই ছবিতে কাজ করেছেন।  অনেকেই মনে করছেন এই ছবিটি বড় হিট করবে এবং বাংলা চলচ্চিত্রে একটা জায়গা করে নেবে।

Badsha Moitra in Alyea during the shooting

বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালনায় আইপিএস আধিকারিক ড. হুমায়ুন কবীর এবার পরিচালক হিসেবে আমজনতার মনে কতটা ঝড় তুলতে পারেন সেটাই দেখার। পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নায়ক, নায়িকা, গায়ক, গায়িকা আর পরিচালকের অভাব ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এবার আশা করা যায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও দক্ষ পুলিশ আধিকারিক ড. হুমায়ুন কবীরের হাত ধরে এই সাংস্কৃতিক শুন্যতার অবসান ঘটবে। ‘আলেয়া’ ছবিটির এখন এডিটিং চলছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে রিলিজ করছে ছবিটি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে এই ‘আলেয়া’।

‘আলেয়া’ ছবির কাহিনী বড় টানটান ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে বলে জানান পরিচালক। ছবিটি বিষয়-বৈচিত্র‍্যে ভরা। দারুণ চিত্রনাট্য লিখেছেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। ড. হুমায়ুন কবীর সাহেব সৃজনশীল পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের নিকট তিনি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।
ড. কবীর সসাহেব দ্রুত অনেক কাজ শিখলেন এই প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে গিয়ে।
ছবিতে চার সখীর বাস্তবিক গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচারক ড. হুমায়ুন কবীর সাহেব। চার চরিত্রে তুখোড় অভিনয় করেছেন আলেয়া’র চরিত্রে (প্রিয়াংকা), রুমানা’র চরিত্রে (সায়নী ঘোষ), শ্যামা’র চরিত্রে (অংকিতা) আর সুমনা’র চরিত্রে বিশিষ্ট মডেল ও নায়িকা তনুশ্রী চক্রবর্তী। দুইজন মসুলিম চরিত্র ও দুইজন হিন্দু চরিত্র নিয়েই এই ছবি। তাঁদের বাস্তবিক গল্প দিয়েই এই ছবির চরিত্রকে তুলে ধরতপ চেয়েছেন, নবীন পরিচালক ড. হুমায়ুন কবীর। আলেয়ার ১৭ বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। আলেয়া বিয়ে করতে চায়নি, তাঁর সখীদের সঙ্গে সে তখন বার ক্লাসে পড়ছে। তাঁর সখীরা প্রতিবাদ করেও তাঁর বিয়ে আটকাতে পারেনি। তাঁর বাবা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল। ভারতবর্ষ তখন বড় জটিল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছিল। ২০০২ সাল গুজরাট
দাঙ্গার সময় তাঁর প্রভাবও পড়ে আলেয়ার গ্রাম বসিরহাটে। তাঁর বিয়ের দিন এলাকায় চরম ভাবে দুই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মধ্যে দাঙ্গা লাগে। তবু তাঁদের চার সখীকে কেউ আলাদা করতে পারেনি। পরিচালক  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার প্রয়াস নিয়েছেন। ওই সময়ের ঘটনা তুলে ধরে। দুই সন্তানসহ আলেয়াকে তালাক দেওয়া হয়। তাঁর স্বামী জোর করে তাঁকে তালাক দিল। আলেয়ার জীবনে নেমে আসে চরম ঘাত-প্রতিঘাত। নানান ভাবে জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার লড়াই করে সে।
এই ছবিতে অন্যদিকে সুমনা নিউ টাউন থানায় এসআই পদে আসীন। ছবিটির শুরু হচ্ছে নিউ টাউন থানা থেকে। সুমনার নেতৃত্বাধীন পুলিশ ফোর্স কলকাতার নাইট ক্লাবে হামলার মোকাবিলা করতে যায়। পুলিশ ও সমাজবিরুদ্ধ লোকের মধ্যে গুলি চলে এবং একজন বার ডান্সার গুলি খেয়ে মারা যান। এই ঘটনায় দারুণ মোড় নেয় ছবিটি। সুমনা চরম ভাবে সমালোচিত হন, ওই ঘটনার জন্য। সে অনেক তদারকি করে নিজের এলাকাতে বদলি হওয়ার জন্য। অবশেষে সে হাসনাবাদে পোস্টিং পায়। নিজের এলাকায় চলে আসে। বশিরহাটের ডিএসপি (বাদশা মৈত্র) তাঁকে একটি খুনের তদন্তভার দেয়। তদন্ত করতে গিয়ে সে দেখল এই আলেয়া তাঁর একান্ত আপন চার সখীর মধ্যে অন্যতম। আলেয়া মার্ডার তদন্তে সুমনাকে সিরিয়াস ভূমিকায় পাওয়া যাবে।
আরও অনেক ঘটনা আছে ছবিতে।

Tanushree Chakraborty

বাল্যবিবাহ যে কতো ক্ষতি করছে সমাজকে তা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন পরিচালক। আশা করা যায় আগামীতে আরও অনেক সামজিক সমস্যা নিয়ে ড. হুমায়ুন কবীর ছবি করবেন। সমাজকে সচেতন করতে তিনি পরিচালকের গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। সুমনার বিপরীতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক আমন রেজা।

মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট থাকার সময় হিরোইন পাচার ও গরু পাচার রুখে দিতে ড. হুমায়ুন কবীর বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। অন্যায়কে তিনি কড়া হাতে দমন করেন এবং আইনের শাসন দিতে তিনি সর্বদা অপরাধীদের রেয়াত করেননি। অনেকের এখনও মনে আছে বাম শাসনে তিনি হাত কাটা দিলিপকে হাতে-নাতে ধরে জেলে ভরে দিয়েছিলেন। তিনি গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান সর্বত্র। তাঁর কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে বহু গরিব মানুষ চরম উপকৃত হয়েছেন। আজও মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ তাঁর জন্য মনে প্রাণে আশীর্বাদ করেন তাঁর কাজের জন্য। তিনি সমাজ কল্যাণে আরও অনেক বেশি বেশি কাজ করে সমাজকে সামনে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এই প্রত্যয় এখনও তাঁদের মনে।

ফারুক আহমেদ

‘আলেয়া’ ছবিতে চিত্রগ্রহণে প্রভাতেন্দু মন্ডল, ফটো তুলেছেন মতিলাল মন্ডল প্রমুখ। বাঙালি সমাজকে বিশেষ বার্তা দিতে বড় পর্দায় আসছে আলেয়া।

 (লেখক  কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালযের দূর শিক্ষা বিভাগের সহ অধিকর্তা ও ‘উদার আকাশ’  পত্রিকার সম্পাদক)
Share the news