- অনির্বান সেন
ইংরেজরা দু’শো বছরের কাছাকাছি আমাদের শাসন এবং শোষন করেছে। ৩৪ বছর নয়; টানা, নিরবচ্ছিন্ন ২০০ বছর। তাদের এই শাসন বা শোষনকালে তারা কি করেছিল? দেশের সম্পদ, বিভিন্ন কর বাবদ দেশের আপামর ভারতবাসীর থেকে অর্জিত অর্থ- এসব নিয়ে তারা নিজেদের দেশ এবং ব্যক্তি নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করেছিল। আমাদের অবস্থার কিন্তু কিছু উন্নতি হয়নি। বরং আমরা গরীব থেকে গরীবতর হয়েছি। এই অবস্থার থেকে বেড়িয়ে আসতে সংগ্রাম, তাতে হাজার হাজার মানুষের রক্ত আর লক্ষ-লক্ষ পরিবারের অপুরনীয় ক্ষতি… তারপর একসময় ইংরেজরা বুঝতে পারল এই দেশটা ছিবড়ে হয়ে গেছে। এখান থেকে কিছু পেতে গেলে খাজনার থেকে বাজনার দাম বেশী পরে যাচ্ছে। মূলত তাদের এই চিন্তার রাস্তা বেয়ে এলো আমাদের বহুকাঙ্খিত স্বাধিনতা; আমাদের আবেগের, স্বপ্নের স্বাধীনতা।
কিন্তু মাত্র ৭৩ বছর কাটতে না কাটতে স্বাধীনতার ফানুস ছিঁড়ে-ফুটে সেই জঘন্য শোষণের রূপটি আবার প্রকট হয়ে পরেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কলা… যেদিকে তাকাবেন কেবল নৈরাশ্যের হাতছানি।
স্বাধীনতার আগে থেকেই দক্ষিণ পন্থী মানুষজন নিজেদের আখের গুছিয়ে জনদরদী নেপো সেজে হাঁড়ি ধরে দই সাবড়ে শেষ করেছেন। এই দক্ষীণ-পন্থীদের মধ্য আবার কিছু মানুষ বামপন্থী সেজে আঁখেরে সেই দক্ষিণপন্থী শক্তির সাথে হাতকে আরো শক্ত করেছেন আর এদিকে-ওদিকে গুটিকয়েক প্রকৃত বাম-উত্থানের সম্ভাবনাকে সমূলে বিনাশ করেছেন। চে -মাও পার্টি অফিসের দেওয়ালে শোভা বৃদ্ধি করেছে। বিপ্লবকামী, সামাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রকৃত বামপন্থী মানুষগুলোকে এরা জনগণের কাছে পরিচয় করিয়েছেন উগ্রপন্থী, হন্তারক হিসেবে।
সেই গুটিকয়েক মানুষগুলোও আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন বলা যায়। তাহলে দেশে রইলেন কারা ? কিছু পশু সদৃশ্য চাষী -শ্রমিক। কিছু লেখাপড়া জানা, অফিসে চাকরি করা, খবরের কাগজ পড়ে বুদ্ধিমান হওয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং যে কোন অবস্থায় সবচেয়ে নিরাপদা থাকা উচ্চবিত্ত শ্রেণী। গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত কিন্তু একনায়কের রাস্তাকেই সুগম করে – এই সত্য আজ কে না বোঝেন?
দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র স্লোগান তুলেছিল বলে আমাদের গায়ে বড় বড় ফোসকা পরেছিল। অন্য কারো দিকে না, কেবল নিজের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে বলবেন স্যার … ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় কি না?
(লেখক একজন নাট্যকার। নিবন্ধে প্রকাশিত মত ব্যক্তিগত)